ঐকমত্যের ভিত্তিতেই আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ছাত্র-নাগরিকের নতুন দল। শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতা কাটলেও অন্দরে দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে। আগামী ২৬শে ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সমাবেশ করে নতুন দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। এ উপলক্ষে বড় জমায়েত ঘটাতে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতেই নতুন দল আসবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এ জন্য আন্দোলনের সব পক্ষের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পদ-পদবি নিয়ে ইতিমধ্যে সমঝোতা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
নতুন দলের কমিটির কাঠামোয় শীর্ষ চারটি পদ- আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র। তবে এর সঙ্গে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব পদ দুটি সৃষ্টি হতে পারে। বিরোধ মিটাতেই এ পদ দুটি সৃষ্টি করা হচ্ছে। শীর্ষ এসব পদে আলোচনায় আছেন- নাহিদ ইসলাম, আখতার হোসেন, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আলী আহসান জুনায়েদ ও নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী।
এ ছাড়াও নারী ও সংখ্যালঘু কোটায় সামান্তা শারমিন ও অনিক রায়ও পেতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ পদ। কমিটিতে আহ্বায়ক পদে সর্বসম্মতিক্রমে নাহিদ ইসলামের নাম চূড়ান্ত। তিনি সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।
তার ব্যাপারে ঐকমত্য থাকলেও সদস্য সচিব পদে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে ছাত্র-আন্দোলনের নেতারা। তিনটি ধারা হলো- নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন অনুসারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ অনুসারী আর নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী অনুসারী। তিন পক্ষই নিজ নিজ নেতাকে সদস্য সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে চাইলে বিরোধ সৃষ্টি হয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের অন্দরে। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে সমঝোতার চেষ্টা চালানো হয়। মূলত আখতারপন্থি ও জুনায়েদপন্থিরা প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ান। আখতারের অনুসারীদের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সাবেক নেতাকর্মী। আর জুনায়েদ অনুসারীদের মধ্যে শিবিরের সাবেক কর্মীদের প্রভাব রয়েছে।
অন্যদিকে নাসীরের অনুসারীরা মূলত উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের অনুসারী। এ ছাড়া বামপন্থি একটি অংশ রয়েছে। তারা এ পদে নাসীরকে বসাতে চান। আখতার ও জুনায়েদ অনুসারীদের মধ্যে চলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথার লড়াই। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিরোধ চলছে ছাত্র-নাগরিকের প্ল্যাটফরম জাতীয় নাগরিক কমিটির অন্দরে। দফায় দফায় বৈঠকে বসেন সব পক্ষ। ঐক্যে যখন ফাটলের সুর তখন নতুন করে সমঝোতা হয়েছে ছাত্র-আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে।
এর আগে বিরোধ মেটাতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব পদ দুটিতে জুনায়েদ অনুসারীদের দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু শুরুতে তাতে সায় দেয়নি তারা। তাদের দাবি শীর্ষ চারটি পদের অন্তত একটি তাদের দিতে হবে। গতকাল বিকালেও এ বিষয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় নাগরিক কমিটির মধ্যে। সেখানে সমঝোতা হয়েছে- ঐক্যবদ্ধভাবে দল গঠনের ব্যাপারে। তবে এদিনের বৈঠকে জুনায়েদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
গতকাল নাগরিক কমিটির দুই যুগ্ম সদস্য সচিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২৬ই ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া এভিনিউর সামনে থেকে আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে নতুন দলের। এদিকে নতুন দলের আত্মপ্রকাশকে কেন্দ্র করে তিনটি উপকমিটি গঠন করেছে নাগরিক কমিটি।
ওদিকে নতুন দলের বেশ কয়েকটি নাম নিয়ে পর্যালোচনা করছেন নেতারা। এখন পর্যন্ত নাম চূড়ান্ত হয়নি।
খুলনা গেজেট/এএজে